মুজিব বর্ষ ও বাঙ্গালীর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে জাতির অঙ্গীকার

আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর তাই এই সুবর্ণ জয়ন্তী স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী নামে পরিচিত। ঠিক একইভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে উদযাপনের লক্ষ্যে সরকার ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয় টুঙ্গি পাড়ার শেখ পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ যা ছিল বাংলার বাঙ্গালীদের স্বপ্নের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সারথি। একটি পরাধিন রাষ্ট্রকে স্বাধীন করার জন্য এমন একজন রাজনীতিবিধের প্রয়োজন ছিল। যিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলার মানুষকে আশা-ভরসা দিয়ে রক্তিম সূর্যকে ছিনিয়ে চিরতরের জন্য দেশকে মুক্ত করেছেন সেই পাক-হানাদার বাহিনীর হাত থেকে। স্বাধীন বাংলাকে মুক্ত করার পিছনে যে কত রক্ত, কত লাঞ্ছনা, বঞ্ছনা গেছে তার কোন হিসাব নেই। নিম্নের বর্ণনায় আমরা পদে পদে তা উপলব্ধি করতে পারবো।
“৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে নেত্রিতের অভাব বুঝতে দেননি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নিরংকুশ বিজয় লাভের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর স্বপন পূরণের আশা কিন্তু ঘাতকদের কি তৃষ্ণা মিঠে আর সহজে কি গদি ছেড়ে দিতে চায়। তাই ১৯৭১ সালের ৩রা জানুয়ারী রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় শেখ মুজিব জনপ্রতিনিধিদের শপথ পাঠ করান। আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সদস্যরা ৬ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা এবং জনগণের প্রতি অনুগত থাকার শপথ নেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভূ্ট্টো কোয়ালিশন সরকার গঠনের ঘোষণা দিলেও শেখ মুজিব ও ভূট্টোর তিন দিনের আলোচনায় তাঁরা ব্যর্থ হন। এরপর রাজনীতির প্রেক্ষাপট দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। ১লা মার্চ ইয়াহিয়া খান ভূট্টোর পক্ষ নিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিতের ঘোষণা দেন। এবার এই বাংলার বন্ধু আর থেমে না থেকে ৭ই মার্চ ঘোষণা করেন- “রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব।
এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ্”। তাইতো ২৫শে মার্চ নেত্রিতের কারনে পাকিস্তান কারাগারে যেতে তিনি কুণ্ঠাবোধ করেননি। আর তাঁরেই কণ্ঠে ঘোষিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, এ যেন হানাদার বাহিনী ইয়াইয়া খানের পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করে ছিল বাংলার সর্বস্তরের মানুষ সৃষ্টি হয় ২৫শে মার্চের কালো রাত্রি। ভয়াবহ এই কালো রাত্রির কথা ভুলার নয়, ভুলার নয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ কিন্তু বাংলার বিদ্রোহী সমাজ এক সুরে এক কথা স্বাধীনতা চাই; ঝরুক রক্ত বৃথা যেতে দিব না। টানা ৯মাস যুদ্ধ চলে, যুদ্ধ চলা কালীন প্রতিদিন প্রতিরাতকে কলঙ্খিত করেছে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। নিরস্ত্র নর-নারী, শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো বাংলার মাঠ-ঘাট, নদী-নালা।
অগ্নিসংযোগ, নারীভোগকারি, পাকিস্তানী দালাল ও লুটতরাজে জরিত হয়েছিলো বাংলার কিছু জনগণ কিন্তু বাংলার দামাল ছেলেরা তা পরোয়া না করে ঝেঁপে পড়েছিল পাকিস্তানী জল্লাদের উপর সহযোগিতায় ছিলেন ভারত সরকার। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাঙালিরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল। বাঙালি সেনাবাহিনী, ইপিআর, আনসার এবং পুলিশ পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললো। শুরু হলো আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ। ভারত স্বাধীনতা যুদ্ধে সার্বিকভাবে সাহায্য করেছিল। যুদ্ধ চলা কালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিততে ১৭ই মে কুষ্টিয়ার বদ্যনাথ তলায়(মুজিবনগরে) আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মিলিত হয়ে প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করা হল। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করা হয়। জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক নিয়োগ করা হলো।
এবার মাঠ ঘাট বেঁধে নেমে পড়ল সবাই হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাক হানাদার বাহিনী বাংলার মাটিতে তাণ্ডব লীলা চালায়। যেখানে সেখানে গণকবর ও লাশের স্তুপ বাদ যায়নি শিশু মহিলারাও। গঠিত হয়েছিল রাজাকার, আলবদর ও আল-শামস বাহিনী যারা মূলত মুক্তিবাহিনীকে প্রতিহত করতো। এদিকে ছাত্র-শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, ডাক্তার-প্রকৌশলী, হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান, কৃষক-শ্রমিক সবাইকে নিয়ে গড়ে উঠেছিলো মুক্তিবাহিনী।
এই মুক্তির জয়গান ছিল ঘরে ঘরে, তাই হানাদার বাহিনী আর বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। বাধ্য হয়েছিলো বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ তথা বাংলার জনগনের হাতে দেশকে বুঝায়ে দেওয়া। তবে ১৪ই ডিসেম্বর বাংলার বুদ্ধিজীবীদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছিলো তা ভুলার নয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর এ দেশ মুক্ত হয়; জয় হয় বাংলার।
বাংলার জয় হল, মুক্ত হলো বাঙলা কিন্তু এই বীর নেতা কি মুক্ত হয়েছিল ষড়যন্ত্রের শিকল থেকে, পেয়েছিল ছিল কি রেহাই স্বাধীনতা বিরোধীদের হাত থেকে। তাইতো এই বাংলার বন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল এমনকি বাংলার ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার অনেক চেষ্টাও করা হয়েছিল। এমনকি ১৯৭৫-পরবর্তীতে তাঁর কোন জন্মদিনের খবর মিডিয়ায় প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি। তবে ১৯৭৭ সালের ১৭ মার্চ সংবাদ প্রকাশ করতে না পারলেও ১৮ মার্চের পত্রিকায় জন্মদিন পালনের খবর প্রকাশ করে। যদিও ‘ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতার জন্মদিন’ হিসেবে খবর প্রকাশ করে। কোথাও বঙ্গবন্ধু তো দূরে থাক, শেখ মুজিব নামটিরও উল্লেখ ছিল না।
আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বাংলার জনগণ সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছে। এদিকে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্ম দিন উপহার পেয়েছি আমরা এযেন মেঘ না চাইতে জল। তাই কভিড মহামারির মাঝেও সামাজিক বিধি মেনে অপেক্ষারত থেকে আজ আমরা পালন করছি সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর শততম জন্ম বার্ষিকী। কভিড মহামারির মাঝেও আনন্দের বিষয় আমাদের দেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক বেশিরভাগ সূচকে বাংলাদেশ ছারিয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়াকে।
এদিকে দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা বহুমূখী সেতুর কাজ প্রায় শেষের পথে। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সেতুতে শেষ স্প্যান বসানোর পর মানুষের মনে আনন্দের দোলা খাচ্ছে। মোট ৪২টি পিলারের উপর ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের সর্ববৃহৎ সেতু। পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পুরন হতে চলছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থার (এফ এড) “দ্য স্টেট অব ফুড সিকিউরিটি-২০১৫” শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এম ডিজি) পূরনের ক্ষেত্র কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ সবচেয়ে সফল।
বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে ফাঁসি কর্যকর করেন।
৩১জুলাই ২০১৫ দুই দেশের সিটমহল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে ৬৮ বছরের দীর্ঘ সীমান্ত জটিলতার স্থায়ী অবসান ঘটে।
উপগ্রহ, তা আবার নিজেদের মহাকাশে! থালস এলোনিয়া নামে ফরাসি-ইতালিয়ান কম্পানির সঙ্গে ২৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার । বঙ্গবন্ধু-১ নামে প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট নির্মাণ করবে এই কম্পানিটি এবং নির্ধারিত কক্ষপথে সেটি স্থাপন করা হয় এবং সফলভাবে উৎক্ষেপন করা হয় যা দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে অত্যন্ত মজবুত করে। এছাড়াও মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের জন্য স্যাটেলাইটের ধরন ও প্রকৃতি নির্ধারণে ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে সরকার।
বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি ৮১ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.২ বিলিয়ন ডলার। একই সঙ্গে বেড়েছে রপ্তানি পণ্যের সংখ্যাও। পোশাক রপ্তানি করে আমাদের এখন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ই পি বি) তথ্য অনুযায়ী নতুন বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি মূল্য ক্রমেই বাড়ছে।বিজিএমই এর তথ্য অনুযায়ী আরো প্রায় ২৫ টি দেশে আমাদের পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে নতুন বাজারে তিন শতাংশ হারে প্রণোদণা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
এপর্যন্ত দেশে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাড়াল ১০৬টিতে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হোউক জাতি এটা মাথায় রেখে এই সব বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি। এ পর্যন্ত দেশে বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমদিত হয়েছে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আশা করা যাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।তাই আমরা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্ঠে শুনতে পাই “প্রতিটি জেলায় জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিস্থাপিত হবে”। বে-সরকারী প্রাইমারী স্কুল গুলোকে সরকারীকরণ , মেয়েদের বিনা বেতনে অধ্যায়নের সুযোগ, প্রাইমারী স্কুলের ছাত্রদের ভাতা প্রদান, বিনামুল্যে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বই বিতরণ, সব কিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে শিক্ষাখাত একটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বহুল প্রতিক্ষিত মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকারের এই পদক্ষেপকে আমরা স্বাগতম জানাই।এছাড়াও ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চার লাইনে চলবে গাড়ি, গাজীপুরে তারই ধারাবাহিকতায় কাজ চলছে।