পাটগ্রাম সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়ায় স্বজনদের এক নজর দেখতে ভীড়

লালমনিরহাটে পাটগ্রাম উপজেলার নবীনগর-বাউরা সীমান্তে দুই বাংলার মিলন মেলা বসেছে। সনাতন ধর্মালম্বীদের কালীপূজা উপলক্ষে দুই বাংলার মানুষ তাদের স্বজনদের একটু দেখতে,কথা বলাতেই দুর দুরান্তে থেকে ছুটে এসে মিলিত হচ্ছেন কাঁটাতারের বেড়ার কাছে।
শুক্রবার (০৫ নভেম্বর) সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দুই দেশের হিন্দু ধর্মালম্বী ছাড়াও মুসলমানসহ শত শত মানুষ দুই বাংলার আত্মীয়-স্বজন একে অপরকে একনজর দেখার জন্য ভারতীয় কাঁটা তারের বেড়ার দুই’পাশে ভীড় জমান।
দুই বছর পর ভারতে থাকা মেয়ে কবিতা রানীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন মা কামনী বালা (৬০)। এ সময় বাবা খোকা চন্দ্র (৭০) ও বড় বোন ছবিতা রানীকে দেখে অঝড়ে কাঁদলেন ভারতের ধুবগুড়িতে থাকা মেয়ে কবিরা রানী (৩০)। কবিরা রানী শিশু সন্তান কোলে থাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী(বিএসএফ) গেট খুলে দিয়ে তার বাবা মা বোনের সাথে দেখা করার সুযোগ দেন।
পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা নবীনগর গ্রামে খোকা চন্দ্র ও তার স্ত্রী কামনী বালা মেয়ে কবিতার বিয়ে হয় ভারতের ধুবগুড়িতে এর পার প্রতিবছন কালী পূজার সীমান্তে দেখা হয় তাদের।
সরেজমিদে দেখা গেছে, সানিয়াজান নদীর হাটু জল চা বাগান পেড়িয়ে দুই বাংলার মিলন মেলা নজর কেড়েছে। মাঝখানে দাঁড়িয়ে কাঁটাতারের বেড়া দুই পাশে দাঁড়িয়ে দুই দেশের কান্না জড়িত কন্ঠে মা-মেয়ে, আত্মীয় স্বজন, জামাই-শ্বাশুড়ি অনেকেই। দুই বাংলার মানুষের মধ্যে বিনিময় হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী(বিএসএফ) এর পক্ষ থেকে বিতরণ করা হচ্ছে খাবার। খাবার পেয়ে খুশি শিশু-কিশোরা।
জানা গেছে, পাটগ্রাম উপজেলার নবীনগর-বাউরা সীমান্তের মেইন পিলার ৮৮৫ এর সাব পিলার ১১ এস এর কাছে ভারতীয় কুচলিবাড়ী ৪০ বিএসএফ ক্যাম্পের নিকট সনাতন ধর্মালম্বীদের কালীপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মানুষের মধ্যে মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় ভারতীয় কুচলিবাড়ী ৪০ বিএসএফ ক্যাম্পের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে থেকে আসা শিশু কিশোরসহ অন্যনদের মধ্যে (প্রসাদ) খাবার পরিবেশন করা হয়। দুই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন তাদের আপনজনদের দেখে আবেগ আপ্লত হন ও কুশল বিনিময় ও উভয়ে খাবার,ফল বিনিময় করেন।
পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা বাজার এলাকা থেকে আসা নাজমা বেগম বলেন, ভারতে ভাই,ভাবী বসবাস করেন তাই তাদের সাথে দেখা করতে এই কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসেছি। এখনো দেখা হয়নি, তারা আসলে দেখা হবে। করোনা ভাইরাসের কারনে দুই বছর দেখা হয়নি। এবার কালী পূজার কারনে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসেছি তাদের সাথে দেখা করতে।
হাতীবান্ধার বড়খাতা ইউনিয়ন থেকে আসা শ্রী সুদর্শন বলেন, ভারতে আমার ভাগনী থাকেন তাদের সাথে দুই বছর পর দেখা হল। অনেক ভাললাগছে। প্রতিবছর যেন দেখা করার সুযোগ করেদেয়।
এ বিষয়ে বাউরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বসুনিয়া বলেন, করোনার কারনে দুই বছর মিলন মেলা না হলেও এ বছর দুই বাংলার মিলন মেলা হয়েছে। দুই বাংলার আত্মীয়-স্বজনে সাথে তারা উভয়ে দেখা করেন এবং কুশলবিনিময় করেন। দুই বাংলার এই সম্পর্ক যেন আজীযন থাকেন।